শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন

সাতশ সাত কোটি টাকার প্রকল্প ঠেকল ৯১০ কোটিতে

সাতশ সাত কোটি টাকার প্রকল্প ঠেকল ৯১০ কোটিতে

স্বদেশ ডেস্ক: জাতীয় গ্রিডে ৭৫ মেগাওয়াট সরবরাহের প্রত্যাশা নিয়ে ‘সিলেট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট ও কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু দুই দফায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১০ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। শুরুতে ৭০৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ব্যয় বৃদ্ধির জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রাকৃতিক গ্রাসকে দক্ষভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এ জন্য সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুকেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উন্নীত করতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পটি ইসলামিক ডেওভলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে মোট ৭০৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরে ব্যয় না বাড়ালেও প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগের সদস্য শাহীন আহমেদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দক্ষতা ও ক্ষমতা বাড়বে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এদিকে প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ অংশে ৪ একর জমির অধিগ্রহণ বাবদ ৮০ কোটি টাকার সংস্থান ছিল। দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ৩ দশমিক ৯১ একর জমির অধিগ্রহণ বাবদ ১৯ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়ন অংশে ১৬ হাজার ১৯২ ঘন মিটারের জায়গায় ৩১ হাজার ২৭৫ ঘনমিটার ও বিদ্যুৎ বিভাগের রেট শিডিউল ২০১৪ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করায় ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার জায়গায় ১৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে পেয়েছে ১৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পূর্ত কাজ অংশের আওতায় বেড়া ও সীমানা দেয়াল কাজের জন্য পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করায় এ খাতে ৩৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার জায়গায় ৪০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৩০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পূর্ত কাজ অংশে আওতায় অফিসারদের ডরমিটরি কাম ক্লাব নির্মাণকাজে ৬০০ বর্গমিটারের জায়গায় ৯০০ বর্গমিটার ও স্টাফ ডরমিটরি ১৫০ বর্গমিটারের জায়গায় ৩৪০ বর্গমিটার এবং পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করায় এ খাতের ব্যয় ২১৫ কোটি টাকার জায়গায় ৪৪৯ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই খাতে ব্যয় বেড়েছে ২৩৪ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল মূল প্রকল্পের। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই আড়াই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবেও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৯ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূল্যায়িত দরপত্র নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বাস্তবায়নকারী সংস্থার মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় প্রকল্প ঋণ সহায়তার পরিবর্তে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন ফান্ডে রক্ষিত বিপিডিবির নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে চলতি বছরের ১৯ জুন অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। পিইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১০ কোটি টাকা।

প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে মার্কিন ডলার ও ইউরোর বিনিময় হার যথাক্রমে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা ও ৮৪ টাকা ৭৭ পয়সা ছিল। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৮৪ দশমিক ১২ টাকা ও ইউরোর বিনিময় হার ৯৫ দশমিক ১৬ টাকা হারে নির্ধারণ করায় টার্নকি চুক্তির ব্যয় বেড়েছে ৫১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এসব কারণে প্রকল্পটির ব্যয় ফের বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877